LATEST UPDATES

চির সুখী সিমান


কারা সিমান? স্থানীয়রা ‘সিমান’ শব্দটি উচ্চারণ করেন ‘চি-মে-নে’। বলিভিয়ার নিম্নাঞ্চলে অ্যামাজনের চিরহরিৎ (রেইন ফরেস্ট) বনে বাস করে প্রায় ১৬ হাজার সিমান। সেখানে অবস্থিত ম্যানিকুই নদীতে মাছ শিকার, অন্যান্য প্রাণি শিকার এবং পশু চরিয়ে জীবনধারণ করে এই সম্প্রদায়ের মানুষ। হাজার বছর আগের মানব সভ্যতার মানুষের সঙ্গে জীবনধারার মিল আছে সম্প্রদায়টির মানুষের। সিমানদের নিয়ে এই গবেষণায় বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসকদের দলটি বেশ কয়েকবার বিমানে এবং নৌযানে চড়ে ওই অঞ্চল সফর করেছেন। বলিভিয়ার জঙ্গলে বাস করা সিমান সম্প্রদায়ের মানুষের হৃৎপিণ্ড সবচেয়ে সুস্থ থাকে। বিজ্ঞানীরা এবার বিশ্বের সবচে সুস্থ হৃৎপিণ্ডের মানব সম্প্রদায়ের সন্ধান পেয়েছেন। গবেষণায় তাঁরা দেখতে পেয়েছেন, বলিভিয়ার জঙ্গলে বাস করা সিমান সম্প্রদায়ের মানুষের হৃৎপিণ্ড সবচেয়ে সুস্থ থাকে। বিবিসি জানায়, চিকিৎসা বিষয়ক সাময়িকী ‘ল্যানচেট’-এ ওই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, সিমান সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে ধমনী রোগাক্রান্ত হওয়ার কোনো লক্ষণই দেখা যায় না। এমনকি বৃদ্ধ বয়সেও সম্পূর্ণ সুস্থ থাকে তারা। খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের ক্ষেত্রে সিমান সম্প্রদায় ‘অবিশ্বাস্যরকম’ ব্যতিক্রম একটি সম্প্রদায়। সিমানদের মতো জীবনধারা গড়ে তুলতে হলে মানুষকে আবার শিকারজীবী জীবনে ফিরে যেতে হবে জানিয়ে গবেষকরা বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য অংশের মানুষের পক্ষে সে অবস্থায় ফিরে যাওয়া আর সম্ভব নয়। তবে এই সম্প্রদায়টির কাছ থেকে আমাদের শেখার অনেক কিছু আছে। খাদ্যাভ্যাসের তুলনা সিমানদের খাদ্যের ১৭ শতাংশ হচ্ছে বন্য শূকর, টেপার (শূকরের মতো, কিন্তু আকারে শূকরের চেয়েও বড়) এবং ক্যাপিবারা (রোডেন্ট প্রজাতির সবচে বড় প্রাণি)। সাত শতাংশ আছে স্বাদু পানির মাছ। এর মধ্যে রয়েছে পিরানহা এবং মাগুর মাছ। খাদ্যের বাকি অংশ আসে পারিবারিক খামারে উৎপাদিত চাল, ভুট্টা, কাসাভা (মিষ্টি আলুর মতো দেখতে) এবং প্লানটেইনস (দেখতে কলার মতো) থেকে। এর সঙ্গে মেশানো হয় চূর্ণ করা ফল ও বাদাম। অর্থাৎ, সিমানদের ক্যালরির ৭২ শতাংশ আসে কার্বোহাইড্রেট থেকে। এর তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের ক্যালরির ৫২ শতাংশ আসে কার্বোহাইড্রেট থেকে। সম্প্রদায়টির খাদ্যের মধ্যে চর্বির পরিমাণ থাকে ১৪ শতাংশ, যেখানে মার্কিনিদের থাকে ৩৪ শতাংশ। তবে মার্কিন এবং সিমান- উভয়ের আমিষ থেকে প্রাপ্ত ক্যালরির মাত্রা ১৪ শতাংশ। শারীরিক কাঠামো সিমানরা পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের মানব সম্প্রদায়ের তুলনায় শারীরিকভাবে অনেক বেশি সক্ষম। তাদের পুরুষরা প্রতিদিন প্রায় ১৭ হাজার ধাপ হাঁটতে পারে এবং নারীরা পারে ১৬ হাজার ধাপ হাঁটতে। এমনকি যাদের বয়স ষাটের বেশি তারাও দিনে ১৫ হাজারের বেশি ধাপ অতিক্রম করতে পারে। ক্যালিফোর্নিয়ার লং বিচ মেমোরিয়াল মেডিকেল সেন্টারের গবেষক গ্রেগরি টমাস বলেন, ‘তারা প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শরীরচর্চা করে।’ কী বিশেষত্ব সিমানদের হৃৎপিণ্ডের? সিমানদের ‘করোনারি আর্টারি ক্যালসিয়াম’ (সিএসি) পরীক্ষা করে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। এই সিএসির মাধ্যমেই মানুষের রক্তপ্রবাহের মাত্রা এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বোঝা যায়। সিটি স্ক্যানার দিয়ে ৭০৫ জন সিমানের হৃৎপিণ্ড পরীক্ষা করে তারা জানান, ৪৫ বছর বয়সী কোনো সিমানের রক্তেই সিএসি পাওয়া যায় না। অথচ এই বয়সের ২৫ শতাংশ মার্কিনির রক্তেই তা পাওয়া যায়। ৭৫ বছর বয়সী সিমানদের তিনভাগের দুইভাগের রক্তেই কোনো সিএসি পাওয়া যায় না। বিপরীতে এই বয়সী ৮০ শতাংশ মার্কিনির রক্তেই পূর্ণ মাত্রায় সিএসি পাওয়া যায়। এছাড়া সিমানদের মধ্যে ধূমপায়ীর সংখ্যাও নেই বললেই চলে। কী শেখার আছে? ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মিখায়েল গুরভেন বলেন, ‘শুধু সপ্তাহান্তে একবার ব্যায়াম করলেই হবে না। শরীরচর্চার ব্যাপারে একটি সামগ্রিক পদক্ষেপ থাকতে হবে। যেমন- বাই সাইকেলে চড়ে কাজে যাওয়া, সিঁড়ি বেয়ে ওঠা- ইত্যাদি কাজ করা যেতে পারে।’ ডা. টমাস বলেন, ‘স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য আমরা সচরাচর যে ব্যায়াম করি, তার চেয়ে আরো বেশি করতে হবে। আধুনিক দুনিয়া আমাদের বাঁচিয়ে রাখছে। কিন্তু নগরায়ন এবং দক্ষতার ভিত্তিতে শ্রমবণ্টনের মতো বিষয়গুলো নতুন করে ঝুঁকির সৃষ্টি করছে।
Share This :

Post a Comment

 

Top